অটোস্ট্যান্ডের চাদা উঠানো নিয়ে বিরোধ: পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এক পক্ষের মামলা নিলেন ওসি।
রাসেল শেখ
আপলোড সময় :
১৫-০৭-২০২৫ ০৬:৪৭:২১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৫-০৭-২০২৫ ০৬:৪৭:২১ অপরাহ্ন
গাজীপুর প্রতিনিধি:-
গাজীপুরে অটোস্ট্যান্ডের চাঁদা উঠানো এবং বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক এবং শ্রমিক দলের বিরোধে বিএনপি নেতাকে প্রধান আসামী করে মামলা রুজু হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ দুটি অভিযোগ দিলেও জয়দেবপুর থানা পুলিশ এক পক্ষের অভিযোগ আমলে নিলেও অপর পক্ষের অভিযোগের তদন্ত করতেও যায়নি। আবেদনে উভয় পক্ষের বাদী ঘটনার স্থান, তারিখ এবং বর্ণনা একই রকম উল্লেখ করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কর্মকান্ডে বিএনপি, শ্রমিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রতিক্রিয়া। তারা বলছে ওসি সাহেব এক পক্ষের অভিযোগে মামলা নিলেও অজ্ঞাত কারণে অপর পক্ষের অভিযোগে তদন্তে কোনো অফিসারই পাঠান নি।
গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার অটোস্ট্যান্ডে চাঁদা উঠানো ও বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক এবং শ্রমিক দলের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও বিরোধ হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়। তাদেরকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে বিএনপি, শ্রমিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা এবং বাঘের বাজার অটোস্ট্যান্ড থেকে চলাচলকারী চালকেরা প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত না করে দ্রত এক পক্ষের মামলা নিয়ে নিরীহ লোকদেরকে মামলায় আসামী করে বিষয়টিকে ঘোলাটে করে ফেলেছেন। তারা পুলিশের এমন কর্মকান্ডে তীব্র নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানান এবং প্রকৃত দোষীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের দাবী জানান।
গত রবিবার (১৩ জুলাই) গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন এবং একই এলাকার মৃত নওয়াব আলীর ছেলে মিয়ার উদ্দিন। উভয় আবেদনে মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ আবেদনে পুলিশ দেলোয়ার হোসেনের অভিযোগটি দ্রত চাঁদাবাজির মামলা রুজু করেন।
ওই মামলায় গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসলাম উদ্দিনসহ ৫জনকে আসামী করা হয়। মামলার দুই নম্বর আসামী ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহকে রবিবার (১৩ জুলাই) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সে কারাগারে রয়েছে।
থানায় দায়ের করা উভয় পক্ষের বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে জয়দেবপুর থানাধীন বানিয়ারচালা বাঘের বাজার সাকিনস্থ সাফারী পার্ক সড়কের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে অভিযুক্তরা।
উল্লেখিত বিষয়ে আমিসহ এলাকার সাধারন জনগণ ও অটোরিকশা চালকগণ উক্ত বিবাদীদের অন্যায় কার্যকলাপের ন্যায় সঙ্গত প্রতিবাদ করলে বিবাদীগণ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হইয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অত্র এলাকায় অটোরিকশা চালাতে হলে তাদের দাবীকৃত চাঁদা প্রতিদিন দিতে হবে। অন্যথায় তারা অটোরিকশা চালাতে দিবে না মর্মে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসতেছে।
এদিকে, ওই ঘটনায় এক পক্ষের বাদী দেলোয়ার হোসেন তার মামলার প্রধান আসামী গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসলাম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ডে শুনা যায় তুমি আমার নাম যে অভিযোগে আছে সেখানে তুমি কিভাবে স্বাক্ষর করলা। এসময় প্রধান আসামী বাদীকে জিজ্ঞাসা করে তুমি বলতো আমি কি অটোস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা উঠায়? এ প্রশ্নে তিনি (বাদী) বলেন না তুমি চাঁদা উঠাও না। তাহলে কেন আমাকে জড়িয়ে মামলা এবং ফেসবুকে লেখালিখি করা হচ্ছে। তাদের কথোপকথনে একে অপরকে মামা-ভাগিনা বলে সম্বোধন করতেও শুনা যায়।
গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবু তাহের মুসুল্লী বলেন, ঘটনার দিন আহবায়ক কমিটির সদস্য ইসলাম উদ্দিন আমার সাথে দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল। ওই প্রোগ্রামে দলের নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা: এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি তিনি নিজেও অবগত আছেন। তবে মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ জানান, বাঘের বাজার অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। অপর পক্ষ (মিয়ার উদ্দিন) কাউন্টার একটি অভিযোগ দিয়েছে। মিয়ার উদ্দিনের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত চলতেছে, আমরা এখানো সিদ্ধান্ত নেই নাই। যেটা ঘটনা ঘটেছে সেটা আমরা মামলা নিয়েছি। দেলোয়ারের অভিযোগে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মামলা নিয়ে এজাহারভুক্ত আসমী শহিদুল্লাহকে রবিবার (১৩ জুলাই) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুটি অভিযোগে একই ঘটনা উল্লেখ রয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, বাঘের বাজার অটোস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা উঠানো ও বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক এবং শ্রমিক দলের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও বিরোধ হয়। বিরোধের ঘটনাটি একটি পক্ষ গোপনে ভিডিও করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ওই ভিডিও ফুটেজকে পুঁজি করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসলাম উদ্দিনকে প্রধান অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে। ওই ঘটনার সাথে এবং বাকবিতন্ডার সময় ঘটনাস্থলে ইসলাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেও জড়িত নয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk
কমেন্ট বক্স